বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা:গভীর সঙ্কটে অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তাঁর জন্যে গঠিত বেলভিউ ক্লিনিকের ১৬ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড জানিয়েছে, তাঁকে সর্বক্ষণ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তাঁর শারীরিক অবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি। এমনকী, মঙ্গলবার বিকেলের পর থেকে তাঁর কিডনি ঠিকমতো কাজ করছে না। রক্তেও ইউরিয়া এবং ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে। প্রয়োজন হওয়ায় তাঁকে রেনাল রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি দেওয়া হচ্ছে। সাধারণত দুটি কিডনি স্বাভাবিক কাজকর্ম বন্ধ করে দিলে এই থেরাপি দেওয়া হয়। যদিও রাত পর্যন্ত তাঁর সঙ্কট কাটেনি। সোমবার রাত থেকেই তাঁকে সম্পূর্ণ ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে। ২২ দিন ধরে তিনি কলকাতার মিন্টো পার্কের কাছে বেলভিউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে রীতিমতো উদ্বেগে রয়েছেন চিকিৎসকরা। ১৬ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান চিকিৎসক অরিন্দম কর জানিয়েছেন, তাঁর জ্ঞান প্রায় নেই বললেই চলে। চিকিৎসায় সে ভাবে সাড়া দিচ্ছেন না। শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেওয়ায় সোমবার দুপুরে এয়ারওয়ে প্রোটেক্ট করার জন্য সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ইনটিবিউশন চালু করা হয়েছে। আরও দুশ্চিন্তার বিষয় হল, তাঁর নিউমোনিয়া সংক্রমণ ধরা পড়েছে। বয়সের পাশাপাশি তাঁর শরীরে কো–মর্বিডিটির সমস্যা থাকায় সেই দুশ্চিন্তা আরও বেড়েছে। যদিও এখন তিনি কোভিড নেগেটিভ। প্রয়োজন হওয়ায় বিভিন্ন সময়ে বোর্ডের তরফে বিদেশের চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে একটাই আশার কথা। তা হল, সোমবারের তুলনায় মঙ্গলবার রাতে প্রবীণ অভিনেতার ব্লাড কাউন্ট স্থিতিশীল রয়েছে। প্লেটলেটও আর কমেনি। রক্তে হিমোগ্লোবিন এবং অনুচক্রিকার পরিমাণ বেশ কম থাকায় এদিন তাঁর ব্লাড ট্রান্সফিউশন করা হয়েছে। জিআই ব্লিডিং বন্ধ করা গিয়েছে। তবে বর্ষীয়ান অভিনেতার অবস্থা অতিসঙ্কটজনক বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
রাতের খবর, নতুন করে তাঁর অবস্থার অবনতি হয়নি। শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে তুলনামূলক সামান্য স্থিতিশীল। তবে সঙ্কট একেবারেই কাটেনি। অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও তাঁর শারীরিক অবস্থার কোনও উন্নতি হচ্ছে না। উল্লেখ্য, করোনা সংক্রমিত হওয়ার পর বেলভিউতে তাঁকে ভর্তি করা হয়। প্রথম দিকে তাঁর অবস্থা খুবই স্থিতিশীল ও স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু পরে কিছুটা সমস্যা তৈরি হয়। তখন প্লাজমা থেরাপি দেওয়া হয় তাঁকে। তার পর গত সপ্তাহে ফের তাঁর কোভিড পরীক্ষা হলে রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। তখন তাঁর অবস্থা কিছুটা ভালো হয়। চিকিৎসায় সাড়াও দিতে থাকেন অশীতিপর এই অভিনেতা। কিন্তু সমস্যা ফের বাড়াতে থাকে কোভিড এনসেফ্যালোপ্যাথি। তার পরই তাঁর চেতনা ক্রমশ কমতে শুরু করে। গত ২৪ অক্টোবর থেকে তাঁর অবস্থার বেশ অবনতি হয়। সঙ্কটজনক হয়ে পড়ে তাঁর শারীরিক অবস্থা।
প্রবীণ অভিনেতার শারীরিক অবস্থার অবনতিতে চিকিৎসকদের পাশাপাশি উদ্বেগে রয়েছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরাও। সেই সঙ্গে উদ্বেগ ছড়িয়েছে বাংলার সংস্কৃতি মহলেও। অনেক অভিনেতা, অভিনেত্রী থেকে শুরু করে পরিচালক, প্রযোজকরা তাঁর শারীরিক সুস্থতা কামনা করছেন। গত শতকের সাতের দশক থেকে বাংলা সিনেমা জগতে মহানায়ক উত্তম কুমারের পরই ছিল তাঁর স্থান। উত্তম কুমারের অকাল প্রয়াণের পর বাংলা সিনেমায় যে শূন্যতা তৈরি হয়, তিনি যেন একাই সামাল দিয়ে গিয়েছেন তা। ক্রমে নায়ক থেকে চরিত্রাভিনেতার ভূমিকা নেন। নায়ক–নায়িকার অভিভাবকের চরিত্রে দাপটের সঙ্গে অভিনয় করছিলেন। এমনকী, করোনা সংক্রমিত হওয়ার দু’দিন আগেও তাঁকে নিয়ে তৈরি একটি বায়োপিকে অভিনয় করেছেন। এই মুহূর্তে বাংলা সিনেমার সকলেই চাইছেন, তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন।